মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়াতে রাষ্ট্রদূতদের কাজ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
14, January, 2020, 12:28:1:PM
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : আমদানি নির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে সেসব দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে ইসলামিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কথাও বলেছেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার স্থানীয় সময় রাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। আবুধাবির হোটেল শাংগ্রিলায় এই দূত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝি হয়। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নিতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
রাষ্ট্রদূতদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। যারা অস্ত্র বানায় তারা অস্ত্র বিক্রির একটা বাজার তৈরি করে। দেখা যায় যে মুসলিম দেশের জনগণই তার শিকার হয়। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটা নীতিমালা দিয়ে গেছেন। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।
রাষ্ট্রদূতদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বিষয়ে দেখতে হবে কোন দেশে কি চাহিদা এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়, কীভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যায় সেভাবে কাজ করতে হবে।
রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই বাঙালি জাতি আত্মপরিচয় পেয়েছে।
জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ পালন এটা আমাদের একটা সৌভাগ্য। দেশে অনেক প্রোগ্রাম হবে। বিদেশে যারা আছেন এখানেও প্রোগ্রাম করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। আগে অনেক কসরত করে দাতাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো। আমরা এখন সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা এখন কাউকে দাতা বলি না। তারা এখন বলি উন্নয়ন সহযোগী।
নিজস্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ‘বন্ধ’ করার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও বলেন সরকারপ্রধান।
অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের বিমান বহরে নতুন এয়ারক্রাফট সংযোজন করেছি। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করে তাদের। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে।
দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়ে কেউ যেন দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত না হন, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি দিতে সবাইকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দালালদের বিষয়ে সতর্ক করতে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাতে হবে। কেউ যেন দেশের বাইরে যেতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি কাউকে না দেয়, সেদিকে সবার নজর দিতে হবে।
প্রবাসীদের কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যারা প্রবাসে থাকেন, তারা যেন এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।
সম্মেলনে অংশ নেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) কে এম মমিনুর রহমান, ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার, ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ এম এম ফরহাদ, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম, লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার, ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারোয়ার এবং কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।