নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের প্রচারে অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। চলছে কথার লড়াই, প্রতিশ্রুতির বন্যা, উৎসবমুখর নির্বাচনের কোনো অনুষঙ্গই বাদ থাকছে না ভোটের প্রচারে। শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নন, প্রচারের মাঠে দুই সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও দিন-রাত এখন একাকার হয়ে গেছে। মাঘের শীতেও দম ফেলার ফুসরত নেই প্রার্থীদের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে মহল্লার দেয়ালে দেয়ালে পাল্লা দিয়ে চলছে ভোটের প্রচার। ঢাকার আকাশে উঁকি দেওয়ার উপায় নেই, ঢাকা পড়েছে পোস্টারে। মিনিটে মিনিটে প্রার্থীদের প্রচারের গাড়ি মাইকের বিপুল শব্দে ভোট প্রার্থনা করছে সেøাগানে আর রকমারি গান গেয়ে।
ঢাকাবাসী আমাদের সাদরে গ্রহণ করছে : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আমি আশা করছি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাবাসী আমাদের ঢাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তারা ভোট দিয়ে তাদের সেবককে বেছে নেবেন। বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করলেও ঢাকাবাসীর কোনো অভিযোগ নেই। নির্বাচিত হলে বিএনপি কী করবেন এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাও তাদের নেই। তারা শুধু অভিযোগই করছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ হতে গণসংযোগ শুরুর সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তাপস বলেন, আমরা ঢাকাবাসীর উন্নয়নের লক্ষ্যে রূপরেখা দিচ্ছি। যেখানে আমরা যাচ্ছি, ঢাকাবাসী আমাদের সাদরে গ্রহণ করছে। আমাদের উন্নয়নের রূপরেখার পক্ষে বিপুল জনসমর্থন আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের স্বপ্ন ও রূপরেখা নির্বাচনের ইশতেহারে বিস্তারিত বলা হবে। যার কাজ চলছে। শিগগিরই তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা নগরের সব আধুনিক সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা আমরা নেব। ঢাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
গতকাল সকাল থেকে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিল ও নানা সেøাগানে তারা মুখর করে তুলেন আশপাশের এলাকা। দেখা যায়, স্থানীয় কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীরা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উপস্থিত হলে তার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুরান এই এলাকার বিভিন্ন সড়কে গণসংযোগ শুরু করেন তাপস।
দেশটা কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয় : আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করার জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, কোন প্রার্থী বা পরিবারের প্রভাব পড়বে না নির্বাচনে। কারণ, দেশটা কারো পারিবারিক সম্পত্তি না।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গোপীবাগের নিজ বাসায় নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, আমি যতটুক জানি উনি (তাপস) একজন সজ্জন ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক এবং আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, নির্বাচনে কোন প্রকার ইনফ্লুয়েন্স করবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এরপরে নির্বাচনী ফলাফল যা হবে আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু এতে কারচুপি হলে জনগণ কোনভাবেই সেটা মেনে নেবে না।
আপনাদের শারীরিকভাবে বা প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রতিপক্ষ বলছেন সঠিক নয়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, আমার পাশে এখনো মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। উনার নাম আমিনুল ইসলাম। উনি ৫৬ ওয়ার্ডের কামরাঙ্গীরচর এলাকার আমাদের একজন কর্মী। শুক্রবার ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। আর কে অস্বীকার করল, না করল সেটাতে কিছু যায় আসে না। বাস্তবতাতো থেকেই যায়। তার মত আরো অনেককেই আহত করা হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদের ৪১ নম্বর কাউন্সিলর প্রার্থীকেও ফিজিক্যালি আহত করা হয়েছে। আমি বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তারপরও বলবেন সঠিক নয়!
দেশটা কারো জমিদারি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাও কারো কথার পরোয়া করি না। উনারা কি বললেন, না বললেন সেটা তো কিছু যায় আসে না। যেটা দৃশ্যমান সেটা আপনারাতো দেখছেন। এটা কারো নিজের দেশ না। এটা আমাদেরও দেশ। এখানে কারো জমিদারি চলবে না। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সবার সমান অধিকার।
অনেকদিন হয়ে গেল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে কিনা এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রথম দিকে প্রচারণায় তারা আমাদের বলেছিলেন, আমরা কি ভোট দিতে পারব? তারা গত নির্বাচনের আলোকে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এবার যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারা নিজেরাই সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ধানের শীষে ভোট দেবেন।
আধুনিক ও সবুজ ঢাকা গড়বো : মেয়র নির্বাচিত হলে আধুনিক, সবুজ ও গতিশীল ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
গতকাল শনিবার গুলশান স্বাস্থ্যক্লাব পার্কে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হবে আধুনিক, গতিময়, সচল, সুস্থ ও মানবিক ঢাকা। নাগরিকদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করা হবে, তেমনি খেলাধুলার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত মাঠ ও পার্ক। ভোটে যদি জয়লাভ করতে পারি তাহলে এসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। আমি চাই আমাদের আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠকু সুস্থতায়।
ইশতেহার প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম বলেন, রোববার আমার নির্বাচনী ইশতেহার দেব। সেখানে চমক থাকবে। থাকবে আধুনিক, সচল, সুস্থ ও মানবিক ঢাকার গড়ার অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বলতে পারি বিজয়ী হলে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ। আর তাই আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন আমি বিশ্বাস করি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা চলবে না। যানজট যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে নেতাকর্মীদের খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন কোনো কাজ নেতা-কর্মীরা করবেন না। আমি নির্বাচিত হলে জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দিন : সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও দুশাসনের সঙ্গে আপস করেন না বলেই মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। ১ ফেব্রুয়ারি ধানের শীষে ভোট দিলে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যাবে। তাকে আটক রাখা যাবে না। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যই ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তাবিথ আউয়াল।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় মিরপুর ৬নং সেকশন কাঁচা বাজার এলাকায় গণসংযোগ শুরু করার আগে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর তিনি দুপুর ২টা পর্যন্ত ইসিবি চত্ত্বরে পথসভা ও গণসংযোগ করবেন।
তাবিথ আউয়াল বলেন, মিরপুরে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা চলছে। বিজয়ী হলে এসব নির্মূলে কাজ করবো। কাউকে অন্যায় করতে দেওয়া হবে না। মিরপুর গার্মেন্ট শিল্প এলাকা। এখানে কর্মীদের নিরাপত্তা নেই। তাদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করবো। তিনি বলেন, বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করতে বারবার পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বস্তিবাসীরা অনেক কষ্টে আছেন। আমরা নির্বাচিত হতে পারলে তাদেরকে পুনর্বাসন করবো।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাহফুজ হোসাইন খান সুমন, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এবিএম রাজ্জাক, যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।