স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ মঙ্গলবার শেষরাতে আঘাত হানতে পারে সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’। তারপর থেকে বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়। এ সময় ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
‘আম্পান’ এর প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেই ধেয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকাগুলো নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ভোলা : ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১০৪ সাইক্লোন শেল্টার খোলার পাশাপাশি ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সোমবার থেকে উপকূলীয় এলাকায় সকর্তামূলক প্রচার চালাচ্ছেন সিপিপি সদস্যরা। বিচ্ছিন্ন চর ও নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ভোলার ২১টি চরের তিন লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নৌ বাহিনী, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ ও কোস্টগার্ড এ সব মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে সহায়তা করবে। একই সাথে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত ৪০০টিসহ মোট ১১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সবাইকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিরাপদে আসতে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টের ১০ হাজার ২০০ সেচ্চাসেবী উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং শুরু করেছে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষদের জন্য তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা ছাড়াও নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও শিশু খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে, সময় ও পরে এ তিন ধাপেই কাজ করার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আম্পান আঘাত হানার আগেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩ হাজার ৯৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরুত্ব মেনে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার ৩ হাজার ৫১৯টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদেরকে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হবে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবার জন্য ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রেখেছে সিভিল সার্জন অফিস। সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আম্পান পরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম মাঠে কাজ করবে। এর পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’মোকাবিলায় নগরী কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। করপোরেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নির্দেশে সোমবার সন্ধ্যায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। মেয়র নিজেই এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আম্পানের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবেন। উপকূলীয় এলাকার লোকজনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ওই সব এলাকায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হবে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুযোর্গ পূর্ববর্তী, দুযোর্গকালীন ও দুযোর্গ পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষ অবস্থান করতে পারবেন।
লক্ষ্মীপুর : করোনা মহামারির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উপকূলবাসীর জন্য আরও বড় বিপদ হয়ে আসছে। এজন্য লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন থেকে ২০০টি আশ্রয়নকেন্দ্র এবং ৬৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন প্রস্তুত রেখেছে। জেলায় এখন ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, সিগনাল বাড়লেই নদীর বিভন্ন জায়াগায় জেগে ওঠা চর থেকে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
মানুষ যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া গবাদি পশুর জন্য আলাদা ভাবে আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল। র্ঘূণিঝড় আম্পান প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা হট লাইন চালু করা হয়েছে। দুযোর্গ পরবর্তী সময়ে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আম্পান প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের ৩২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৬ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক, তিন শতাধিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মী ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারগুলোর চাবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো দেখাশুনা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার করোনা আক্রান্ত রোগী এবং লকডাউন করা বাড়ির লোকজনকে নিকটবর্তী আইসোলেশন কেন্দ্রে পাঠানে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের জন্য বিশেষ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ৪ নং সতর্ক সংকেত দেখানো হচ্ছে। আবহাওয়ার অবস্থা অবনতি হলে, এলাকার লোকজন ও গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।
বরিশাল : বরিশাল জেলায় ৩১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প আলোর ব্যবস্থা, বাথরুম ব্যবহারের উপযোগী করা এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাঠে থাকা পাকা বোরো ধান ঝড় শুরুর আগেই কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগকে পশু সম্পদ রক্ষায় বিশেষ খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, ঝড় পরবর্তী সময়ে উদ্ধার তৎপরতার জন্য ফায়ার সার্ভিস, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুত বিভাগকে প্রস্তত থাকতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও শিশুদের জন্য শিশু খাদ্যের ব্যবস্থাসহ প্রচুর ত্রাণ মজুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বরিশাল বিভাগের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রত্যন্ত এলাকায় পূর্বাভাস প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করছে।
ঝালকাঠি : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভায় দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা এবং সাইক্লোন সংক্রান্ত আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জোহর আলী।
তিনি জানান, আশ্রায়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে মানুষের থাকার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশনা দেওযা হয়েছে। পাশাপাশি গবাদি পশুও যাতে নিরাপদে আশ্রায় নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
পিরোজপুর : ‘আম্পান’ মোকাবিলায় পিরোজপুরের সাতটি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩২ হাজার ২৫০জন আশ্রয় নিতে পারবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেখানে লোকজন থাকতে পারে।
সোমবার পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক আবু আলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, দুর্যোগে মানুষ আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে অবস্থা বুঝে মেডিক্যাল টিমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় নিরাপদ তথা সামাজিক দূরত্ব মেনে উপকুলবাসীকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সাতক্ষীরায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
উপকূলের বেড়িবাঁধের ঝুকিপূর্ণি ৩৭টি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার আছে বলে জানান তিনি।
সেখানে মঙ্গলবার বিকালের মধ্যে ঝুকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি জানান, উপদ্রুত এলাকায় ১ হাজার ৭৯৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি সহায়তা করছে। প্রয়োজনে অন্য বাহিনীর সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
খুলনা : ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে এমন খবরের পর সতর্ক অবস্থানের রয়েছেন খুলনার প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উপকূলীয় ৪টি উপজেলায় ১০৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ওষুধও মজুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এ ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানয়েছেন, খুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৯টি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে ৩ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার চিন্তা নেই। তাই বিভিন্ন স্কুল-কলেজকেও আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকায় নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬১২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত করা সম্ভব হয়েছে। আরও বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদানের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ২ হাজার ৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। বিভিন্ন এনজিও’র রয়েছে আরও ১ হাজার ১০০ স্বেচ্ছাসেবক। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
মোংলা : অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সোমবার বিকাল থেকে মোংলা বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে সব কাজ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ধেয়ে আসায় উপকূলীয় এলাকার মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সোমবার বিকালে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা মাইকিং করে স্থানীয় মানুষদের সচেতন করে। জেলার উপকূলীয় চার উপজেলার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুতি নিয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার শেখ ফকর উদ্দিন বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলায় সোমবার বিকেল ৫টায় বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্দরে বর্তমানে সার, ফ্লাই অ্যাশ, কয়লাবাহীসহ মোট ১৪টি দেশি-বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে। মোংলা বন্দরের সব নৌযান নিরাপদে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলার চরের শুটকি পল্লীতে এখন কোনো জেলে বা শ্রমিক নেই। কয়েকদিন আগে সুন্দরবন বিভাগের অনুমতি নিয়ে নদীখালে মাছ শিকার করতে প্রায় তিন হাজার জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বনবিভাগের কর্মরত যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুন্দরবনের বিভিন্ন স্টেশন, ক্যাম্প ও ফাঁড়িতে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার নাজমুল কবির ঝিলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পূর্বাভাস পেয়ে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। জেলার চারটি উপকূলীয় উপজেলায় আমাদের সেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছে। সেচ্ছাসেবকরা উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠার জন্য মাইকিং করছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সবাই যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয় তার জন্য কাজ করছেন তারা। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে যাতে আমরা এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারি সেই লক্ষে রেডক্রিসেন্ট কাজ করবে।
|