স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : দেশের উপকূলীয় এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-ব। সারারাত এটি ঘূর্ণিঝড় রূপে থেকেই দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তা-ব চালিয়েছে। সারারাত তা-ব চালানোর পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার পর এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর স্থল নিম্নচাপ হিসেবে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল আম্পান। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আম্পানের বাতাসের গতিবেগ এখন ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। আম্পান ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এর প্রভাবে আজ সারাদেশেই ঝড়-বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৬০ থেকৈ ৮০ কিলোমিটার বেগেও ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় বলেন, আম্পান এখন স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। দেশের সমুদ্র বন্ধরগুলোকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি চলে আসার পর বুধবার সকালে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছিল বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।
সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার অথবা তার চেয়ে বেশি বেগে প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
গতকাল রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঘণ্টা চারেকের তুমুল ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকা।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আসল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। বহু গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে, শত শত গাছ উপড়ে গিয়েছে এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, আম্পানের মূল অংশ অর্থাৎ কেন্দ্র ভারতের মধ্য দিয়েই যাওয়ার কারণেই প্রথম দিকের ঝড়ের যে তীব্র গতি সেই ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায়নি। কিন্তু এর ব্যাস বড় হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একেবারে কাছাকাছি খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রথমে ঝড়ের তীব্রতা দেখা যায়। একইসঙ্গে প্রায় সারা দেশের ওপর দিকে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাত যত বাড়তে থাকে, আম্পান উপকূল থেকে তত ওপরে স্থলভাগের দিকে উঠতে থাকে।