মুুফিজুর রহমান নাহিদ, স্টাফ রিপোর্টার : বেশ কিছু অভিযোগ ও ৬ প্রার্থীর বর্জনের মধ্যদিয়ে সিলেটের ৬টি আসনে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে টানা ভোট।
শীতের সকালে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে সংখ্যা। বিশেষ করে দুপুরের দিকে বেশ কিছু কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়।
এদিকে, ভোট চলা অবস্থায় দুপুরে সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) একসঙ্গে ভোট বর্জন করেন ৪ প্রার্থী। তারা হলেন- গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), বিশ্বনাথ পৌরমেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া (লাঙ্গল) এবং তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব (সোনালী আঁশ)।
দুপর দেড়টায় ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে প্রেস ব্রিফিং করে এ ৪ জন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ- সিলেট-২ আসনজুড়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের এজেন্টদের মারধরসহ হুমকি-ধমকি প্রদান করেছে। যার ফলে তারা ভোট বর্জন করেন।
একই সময়ে সিলেট-৪ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ) ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেন তিনি। একেবারে শেষ সময়ে (বৃহস্পতিবার বিকালে) এসে সিলেট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালও (ট্রাক প্রতীক) ভোট বর্জন করেন। তাঁর অভিযোগ- বালাগঞ্জের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় এবং মারধর করা হয়। এছাড়া নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জাল প্রদানের অভিযোগ করেন দুলাল।
অপরদিকে, সিলেট-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ফেঞ্জুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৩৬টি কেন্দ্রের ভোট প্রত্যাখ্যান করেন। নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে জাল ভোট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে রবিবার বিকাল পৌনে ৪টায় তিনি এসব কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। এসময় তিনি এসব কেন্দ্রে ফের নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান ইলেকশন কমিশনের কাছে।
অন্যদিকে, সিলেট-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত মহানগরের পাঠানটুলা এলাকার একটি ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, রবিবার বেলা ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার পাঠানটুলা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবার আলী শেখ।
তিনি জানান, প্রায় ১০০ থেকে ১২০ জন দুর্বৃত্তরা একটি গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে পাঠানটুলা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০৫ প্রার্থী। জেলায় ৩৫ জন।
সিলেটে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মাঠে ছিলো দিনভর। এছাড়া মাঠে ছিলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনস্থ স্ট্রাইকিং টিমও।
এবারের সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনে মোট ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩১ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ ও মহিলা ভোটার রয়েছেন ১৩ লাখ ২২ হাজার ৯২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১০ জন। ভোটকেন্দ্র ছিলো এক হাজার ১৩টি ও ভোট কক্ষ ছয় হাজার ছয়টি।
সিলেটের ৬টি আসনে লড়েছেন যারা :
সিলেট-১ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন (নৌকা), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী আব্দুল বাসিত (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি)-এর প্রার্থী ইউসুফ আহমদ (আম), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক (মিনার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সোহেল আহমদ চৌধুরী (প্রতীক)।
সিলেট-২ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), বিশ্বনাথ পৌরমেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মো. জহির (ডাব) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসাইন (আম)।
সিলেট-৩ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান (লাঙল), বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশ (বিএমএ)-এর মহাসচিব- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. মইনুল ইসলাম (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আফরোজ (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম (ঈগল)।
সিলেট-৪ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ (নৌকা), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন কামরান (মিনার) এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ)।
সিলেট-৫ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ (নৌকা), বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেতলি), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ আল কবির (ট্রাক), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. বদরুল আলম (ডাব) এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) প্রার্থী মো. খায়রুল ইসলাম (হাত-পাঞ্জা)।
সিলেট-৬ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন (ঈগল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী আতাউর রহমান আতা (ছড়ি), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী (সোনালী আঁশ) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী সাদিকুর রহমান (মিনার)।
এদিকে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (বিকাল ৪টা ২০) সিলেটের ৬টি আসনের কেন্দ্রগুলোতে শুরু হয়েছে ভোট গণনা। গণনা শেষে ৬ প্রার্থী হাসবেন বিজয়ের হাসি।
|