কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৮ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ও তার বাবার পরিচয় ব্যবহার করে ওই বিভাগের শিক্ষকদের দীর্ঘদিন যাবত হুমকি দিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষকগণ এ যাবত দুইটি জিডি করেছেন৷ তবে সেই শিক্ষার্থী ও তার বাবা এই কাজ তাদের নয় বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতও দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৯ মে থেকে ২টি ইমেইল আইডি ব্যবহার করে ঐ শিক্ষার্থী ও তার বাবার পরিচয়ে এ পর্যন্ত ৭ বার হুমকি দেওয়া হয় বিভাগটির শিক্ষকদের। শুরুতে শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে ই-মেইলগুলো পাঠানো হলেও সর্বশেষ ৯ নভেম্বর শিক্ষার্থীর বাবার নাম ব্যবহার করে ইমেইলগুলো পাঠানো হয়। হুমকি দেওয়া হয় ফার্মেসি বিভাগের বিদেশে থাকা শিক্ষকদেরও।
হুমকি বার্তায়- ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বানানোর জন্য এবং সিজিপিএ চারে চার প্রদানের জন্য বিভাগটির শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান বিভাগটির শিক্ষকেরা। বলা হয়, আমার মেয়েকে শিক্ষক না বানালে ফল খারাপ হবে। আমার ক্ষমতা অনেক দূর পর্যন্ত।
এসব ঘটনায় ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষকেরা ২০১৯ সালের ৩ জুলাই কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় প্রথম সাধারণ ডায়েরিটি করেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ করেন। এতে কিছুদিন ই-মেইল পাঠানো বন্ধ হয়।
পাশাপাশি যে শিক্ষার্থীর পরিচয় ব্যবহার করে ই-মেইলগুলো পাঠানো হয়েছিল, তিনি এসবের সাথে নিজের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়ে লিখিতভাবে জানান।
তবে চলতি বছরের ৯ নভেম্বর থেকে আবারও শিক্ষার্থীর বাবার নামের এক ই-মেইল থেকে হুমকি দেয়া শুরু হলে বিভাগটির শিক্ষকেরা গত ১ ডিসেম্বর ফের জিডি ও রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দেন।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ওই শিক্ষার্থী বলেন, এ ব্যাপারে আমার একদমই ধারণা নেই। কে বা কারা আমার আর বাবার পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া এসব ই-মেইল পাঠাচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পড়াশোনা নিয়েও আমি খুব চিন্তায় আছি।
অন্যদিকে তার বাবা বলেন, আমি একজন ল ইয়ার। আমার কি ন্যুনতম জ্ঞান নেই যে আমি আমার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা আমার মেয়েকে শিক্ষা দেয় তাদের হুমকি দেব। আমি এসব প্রযুক্তির সাথেও পরিচিত নেই। কে যে কী কারণে আমাদের পিছনে লেগে এসব কাজ করছে আমি জানি না।
তার নাম পরিচয় ব্যবহার করে ই-মেইল পাঠানোর ঘটনায় তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে ২০১৯ সালে একবার ডেকেছিলেন আমি ও আমার মেয়ে তখন লিখিত দিয়ে এসেছি যে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এরপর অনেকদিন এসব ই-মেইল আসেনি, ভেবেছিলাম এগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবার শুরু হয়েছে। আমাকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেকেছে। আমি গিয়ে সব ডকুমেন্ট নিয়ে থানায় জিডি করবো। কারা এই কাজ করছে তা উদঘাটনের জন্য যা যা করা লাগে আমি করবো।
এসব হুমকি ধামকির ঘটনায় নিজেদের জীবন ও পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
বিভাগটির প্রধান সৈয়দ কৌশিক আহমেদ বলেন, এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। দীর্ঘ সময় যাবত আমরা এসব হুমকির ওপর আছি। গত বছর একটি জিডি করলেও আমরা কোন ফলাফল পাইনি যে কারা এটা করছে। এরপর গত ১ তারিখ আবারও আমরা জিডি করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ঘটনাটির ব্যাপারে আমরা অবগত। এর আগে ফার্মেসির বিভাগের শিক্ষকেরা অভিযোগ জানিয়েছেন, আমাদের পরামর্শে জিডিও করেছিলেন। আমরা তখন ওই শিক্ষার্থী ও তার বাবাকে ডেকে লিখিত নিয়েছিলাম। কিন্তু আবারো একইভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষকেরা আরেকটি জিডি করেছেন। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনানুগভাবে আগাবো। আমাদের শিক্ষকদের এভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।