নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ : শেবাচিমের পরিচালকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
10, February, 2021, 11:15:30:AM
বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পরিচালকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পাবনা জেলার জাবরকোলের দুই পরীক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম ও জুয়েনা নীতি যৌথভাবে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক রুবাইয়া আমেনা মামলাটির আদেশ অপেক্ষমাণ করেছেন।
মামলায় অপর বিবাদীরা হলেন– বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের উপপরিচালক ও কর্মচারী নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বরিশাল জেলা প্রশাসক, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক ও মেহেন্দিগঞ্জ উলানিয়ার আশা এলাকার আবুল কালাম, পটুয়াখালী বাউফল বিলবিলাস এলাকার আশ্রাফুজ্জামান ও ঝালকাঠী কাঁঠালিয়ার জোরখালী এলাকার মিজানুর রহমান।
মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ১২টি ক্যাটাগরিতে ৩২ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, মাদারীপুর ও বাগেরহাট জেলার প্রার্থীদের আবেদন না করার জন্য বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজুল ইসলাম ও জুয়েনা নীতি সব কাগজপত্র সংযুক্ত করে ফার্মাসিস্ট পদে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব হাসপাতালের উপপরিচালক তাদের প্রবেশপত্র ইস্যু করেন। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষার দিন কমিটির সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দিতে বাইরে থেকে নকল সরবরাহ করে।
বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা বাদে বাকি পাঁচ জেলার কোটা বাদ দিয়ে হাসপাতালে ১২টি ক্যাটাগরিতে ৩২ জন নিয়োগের কথা থাকলেও বরিশালের বাসিন্দা ও হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তাদের স্বজনদের জন্য আবেদন করেন। এদের মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উলানিয়ার আশা এলাকার আবুল কালাম। তিনি বর্তমানে নগরীর রুপাতলী এলাকায় বসবাস করেন। আবুল কালাম সাবেক ও বর্তমান পরিচালকের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় দুই বছর আগে তার চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও তিনি গাজীপুর জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে চালক পদে আবেদন করেন।
হাসপাতালের অফিস সহকারী সৈয়দ নান্নার মেয়ে এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের কবিরের মেয়েকে চাকরি পাইয়ে দিতে একই জালজালিয়াতির মাধ্যমে আবেদন করেন। ওই তালিকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারীর নাম রয়েছে। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রবেশপত্র দেওয়া ও পরীক্ষার সময় বাইরে থেকে উত্তর সরবরাহ করেন। আবুল কালাম শর্তানুসারে নিয়োগ পেতে অযোগ্য হলেও পরিচালকসহ অন্যদের সহায়তায় তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া পটুয়াখালীর আশ্রাফুজ্জামান ও ঝালকাঠীর মিজানুর রহমান শর্তানুসারে অযোগ্য হলেও তারা ফার্মাসিস্ট পদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালক ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৪ প্রার্থীর পরীক্ষার ফল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
পরিচালকের চাকরি মেয়াদ আগামী মার্চ মাসে শেষ হবে। এতে তিনি তড়িঘড়ি করে বেআইনিভাবে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত হন। এ ঘটনায় নিয়োগের সব কার্যক্রম বাতিল চেয়ে পুনরায় সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মামলাটি করলে বিচারক আদেশের জন্য রেখে দেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে হওয়ার কথা জানিয়েছেন।