‘ভাষা আন্দোলন ও সৈয়দ মুজতবা আলী’ শীর্ষক আলোচনা সভা
25, February, 2021, 11:53:57:PM
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, প্রখ্যাত পন্ডিত, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা এবং মাতৃভাষা আন্দোলনের অন্যতম অগ্রসৈনিক সিলেটের কৃতি সন্তান সৈয়দ মুজতবা আলীর স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ভাষা আন্দোলন ও সৈয়দ মুজতবা আলী’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বিটাক এর সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিটাকের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সৈয়দ মুজতবা আলী পরিষদের সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী।
সৌমিত্র দেবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- প্রফেসর নিপেন্দ্র লাল দাস, ওবায়দুল্লাহ সাগর, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক- এডভোকেট জসিম উদ্দিন, মোকাম্মেল চৌধুরী মেনন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্প বলার ভঙ্গি, তাঁর মেজাজ, তাঁর শৈলী, তাঁর ঐশ্বর্য অনুকরণীয়। তিনিই অবলীলায় বিচরণ করতেন কথ্য ভাষার অলিগলিতে, মৌখিক সাহিত্যের পথেপ্রান্তরে। ফলে তাঁর ‘বলা’ ছিল বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
বক্তারা বলেন, ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের সময়ই রাষ্ট্র ভাষা ‘বাংলা’র প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার দাবি তুলেন প্রথিতযশা লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। সর্বদা সদালাপী ও অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। মাতৃভাষা বাংলাকেও রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জোরালো আওয়াজ তুললে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছে তিনি ও তার পরিবার নিগৃহীত হয়। তার পরিবারের উপর দমনপীড়ন চালানো হয়। তিনি সর্বদা রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। পাকিস্তান সরকার তাকে দেশদ্রোহী ও দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী সৈয়দ মুজতবা আলী বুঝতে পেরেছিলেন- মাতৃভাষা ‘বাংলা’র দাবি আদায় করতে না পারলে এদেশ স্বাধীন করা যাবে না। মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি নিখাদ ভালোবাসার টানে তিনি নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে গেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, দেশ স্বাধীনের সূচনা হয়েছিল মুজতবা আলীদের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক সৈয়দ মুজতবা আলীকে। বাংলাদেশের কোথাও কোন রাস্তা বা স্থাপনার নামকরণ পর্যন্ত হয়নি সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে। এভাবে চলতে পারে না।
সৈয়দ মুজতবা আলীর বাড়ি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জের বাহুবলে। বক্তারা তাই দাবি জানান, অন্তত সিলেটের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যেন কীর্তিমান এ সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ‘সৈয়দ মুজতবা আলী সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ার চৌধুরী বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। আমরা যা বলি, তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি না বলেই সৈয়দ মুজতবা আলীকে ধারণ করতে পারিনি। তাকে ধারণ করতে পারলে তার সাহিত্যকর্মকে ধারণ করতাম। তাকে পাকিস্তান ধারণ করতে পারেনি। ভারত গ্রহণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ এখনও যথাযথভাবে তার মূল্যায়ন করতে পারেনি। আজকের বাস্তবতায় সৈয়দ মুজতবা আলীকে অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের কাছে সৈয়দ মুজতবা আলীকে তুলে ধরতে হবে।