বরিশাল ব্যুরো : বরিশাল নগরীরবাসী একটু প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন বিনোদন স্পটগুলোতে ঘুরতে বের হন। এসব বিনোদন স্পটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশ গোডাউন ও মুক্তিযোদ্ধা পার্কে। মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী মানুষ ইঞ্জিনচালিত ছোট ট্রলার নিয়ে কীর্তনখোলা নদীতে বের হয়। এসব ট্রলারের যাত্রীরা কেউকেউ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হয় আবার কেউ কেউ তাদের বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তবে সিংহভাগই তাদের বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ঘন্টাব্যাপী ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা করে চলাচল করে এসব ট্রলার। আবার প্রেমিক জুটি থাকলে বেড়ে যায় এই ট্রলারের ভাড়া, তখন এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকাও নেওয়া হয় এই ট্রলার ভাড়া। ট্রলার ভাড়া করে বিকেল থেকে প্রায়ই সন্ধ্যা এমনকি রাত পর্যন্ত ঘুরতে থাকেন তরুণ-তরুণীরা। এসব ট্রলারে বিভিন্ন সময় তরুণ-তরুণীদের নাচ-গান করতেও দেখা যায়।
একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নগরীতে যেখানে সেখানে নেশা করতে না পারায় মাঝনদীতে ট্রলার নিয়ে নেশা করেন কিছু তরুণ আর এতে তাদের কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। আবির ইসলাম নামে নগরীর এক কলেজ ছাত্র জানান,‘মাঝে মধ্যে আমরা ট্রলারে ঘুরতে বের হই, বুঝেনইতো বন্ধু-বান্ধব সব এক জায়গায় থাকলে কি হয়, রাস্তাঘাটে বসেতো আর সবকিছু খাওয়া যায় না, তাই আমরা মাঝনদীতে একটু-আকটু মাসতি করে থাকি।’
উঠতি বয়সী তরুণদের এই ট্রলারে ঘুরতে বের হওয়ার বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় অসাবধানতার কারনে পা পিলছে নদীতে পড়ে যায় অনেকে। আবার অনেক সময় নাচানাচি করতে গিয়েও নদীতে পড়ে যায় তরুণরা। এতে কেউ উঠতে সক্ষম হয় আবার কেউ তলিয়ে যায় গভীরে। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট শুক্রবার বন্ধুদের সঙ্গে ট্রলারে করে ঘুরতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক-সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে পড়ে মো. ফাহাদ হাসান (১৭) নামে এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজ ফাহাদ নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড গোড়া চাঁদ দাস রোড এলাকার এলাকার মো. বাদল হোসেনের ছেলে। সে জিলা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক জানান, ফাহাদসহ ১০-১২ জন বন্ধু মিলে শুক্রবার বিকেলে নগরীর চর কাউয়া খেয়াঘাট থেকে একটি ট্রলার ভাড়া করে কীর্তনখোলা নদীতে ঘুরতে বের হয়। ট্রলার ছাড়ার কিছুক্ষণ পর তারা হৈ-হুল্লোড় শুরু করে। এর মিনিট পাঁচেক পর কীর্তনখোলা নদীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন এলাকা অতিক্রমের সময় হঠাৎ ট্রলার থেকে নদীতে পড়ে যায় ফাহাদ। এসআই ফজলুল হক আরও জানান, ফাহাদের নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি ট্রলারের মাঝি টের পাননি। ট্রলারে থাকা অন্য বন্ধুরা বিষয়টি মাঝিকে জানালে ট্রলার ঘুরিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ফিরে নদীতে ফাহাদের স্যান্ডেল ভেসে থাকতে দেখেন ট্রলার মাঝি। পরে ফাহাদের এক বন্ধু ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। এরপরই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। দুই দিন পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গত বছরের ২ নভেম্বর সোমবার রাতে ট্রলার ভাড়া করে কীর্তনখোলা নদীতে বন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের সময় পড়ে গিয়ে দ্বীপ ঘোষ (১৭) নামে এক তরুণ নিখোঁজ হয়েছে। ওই দুর্ঘটনাটিও মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে ঘটে। তার বন্ধু রিয়াদের জন্মদিন উদযাপনের লক্ষ্যে তারা একটি ট্রলার ভাড়া করে কীর্তনখোলা নদীতে কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করছিল। অবশ্য দ্বীপ ঘোষ নামের তরুণের মৃত্যু দুর্ঘটনা ছিল না। তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। দ্বীপের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দ্বীপের বন্ধু রিয়াদ হোসেনকেও গ্রেফতার করেছে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
বরিশাল নগরীর বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান,‘মাঝে মধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু প্রশান্তির জন্য পার্কে ঘুরতে যায়, সেখানে গিয়ে প্রায়ই দেখি কিছু তরুণ উশৃঙ্খলভাবে ট্রলারে লাফালাফি করছে। এদের মধ্যে থাকা কেউ কেউ আবার পার্কে ঘুরতে আসা মেয়দের উত্যাক্তও করে থাকে। প্রশাসনের বিষয়টি দিকে নজর দেওয়া উচিত।’
এদিকে একাধিক সচেতন নগরবাসী বলছেন,‘ ‘বিভিন্ন সময় শুনি ট্রলারে ঘুরতে গিয়ে নদীতে পড়ে তরুণরা নিখোঁজ হয়। প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে তার খোঁজ খবর নেওয়া। পাশাপাশি এসব ট্রলার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ট্রলারগুলো বন্ধ থাকলে এধরনের দুর্ঘটনা আর ঘটবেনা বলে আমরা মনে করি। প্রশাসনের কাছে এবিষয়টি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি।’