ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় এবং হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলীর বিরুদ্ধে একই অফিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নারীকে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা রুজুতে পুলিশের নাটকীয়তার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ভিকটিম থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে মামলা রুজু করতে টালবাহানার আশ্রয় নেয়।একদিন পর মামলা নিলেও পালাক্রমে ধর্ষনের ওই ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। মোটা অংকের লেনদেন হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারণ পুলিশ গভীরভাবে অভিযুক্ত ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছে।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিতর্কিত চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় নির্বাচিত হবার পর ধর্ষিত গৃহবধূকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়। সেই থেকে চেয়ারম্যান ও হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলী ওই নারীর স্বামীকে প্রতিবন্ধি কার্ড করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে
আসছিল।

এদিকে গত মঙ্গলবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ওই নারী চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষের বাথরুম পরিস্কার করতে গেলে চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় বাথরুমের দরজা আটকে দিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে এবং পরিষদ থেকে দ্রুত সটকে পড়ে। ইজ্জত হারিয়ে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে হিসাব সহকারী ইব্রাহিম আলীর কক্ষে  গিয়ে ঘটনা জানালে সে ঘটনা ফাঁস না করতে ভয়ভীতি দেখায় এবং সেও ওই নারীকে ধর্ষন করে। এ ঘটনায় ধর্ষিত গৃহবধূ বৃহস্পতিবার রাতে রুহিয়া থানায় অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে মামলা রুজু না করে ভিকটিমকে একটি কক্ষে আটকে রাখে এবং তাকে মামলা না করতে ভয় ভীতি দেখায় একইসাথে আলামত নষ্ট করতে সময়ক্ষেপন করে, বলে অভিযোগ করেন ভিকটিমের স্বামী ।

ওই সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুলতানা রাজিয়া রুহিয়া থানায় গিয়ে ধর্ষিত নারী জবানবন্দি দীর্ঘসময় ধরে শোনেন এবং সাংবাদিকেদের সহযোগিতা চেয়ে থানা কম্পাউন্ড ত্যাগ করেন। সে সময় তাকে মামলা রুজু হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।

অবশেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় পুলিশ মূল এজাহার পরিবর্তন করে ২য় ধর্ষক ইব্রাহিম আলির বিরুদ্ধে ধর্ষন চেষ্টা এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৯(৪)(খ) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১০ তাং ৩০.০৯.২০২২। অথচ ভিকটিমের অভিযোগ অনুযায়ী পালাক্রমে ধর্ষনের ঘটনায় মামলাটি ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় রুজু করার কথা বলে জানান ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু তোরাব মানিক সহ কয়েকজন আইনজীবী।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের অভিযোগ করে বলেন, আমরা মুর্খ সুর্খ মানুষ। আ্ইনের ধারা বুঝিনা।প্রথম অভিযোগটি ছিল হাতের লেখা। পরে পুলিশ ওই  অভিযোগটি পরিবর্তন করে তাদের নিজস্ব কম্পিউটারে দরখাস্ত লিখে এনে আমার স্ত্রীর সাক্ষর নেয়। তাতে কি লেখা ছিল আমরা কিছুই জানি না।

রুহিয়া থানার ওসি মো: সোহেল রানা জানান, বাদীনির জবানবন্দি এবং হাতের লেখা অভিযোগে খানিকটা ফাঁরাক থাকায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাদীনির অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। এ ব্যপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুলতানা রাজিয়া জানান, ভিকটিম যেভাবে জবানবন্দি দিয়েছে সেভাবে মামলা হয়েছে। এটা পালাক্রমে ধর্ষনের ঘটনা না।