স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট: মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের তান্ডবলীলা শুধু মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘায়িত করছে না, সাথে অর্থনীতিতে কালো থাবা বসিয়েছে। করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতির চাকাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির চরম এ ধকল কাটিয়ে উঠতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে সরকারি কর্মর্কর্তাদের অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ স্থগিত করেছে। শুধু বিদেশ ভ্রমণ নয়, দেশের অভ্যন্তরেও যাতায়াত খরচ কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সরকারি দফতরের সবধরণের গাড়ি কেনা বন্ধ করেছে, বিলাসী ব্যয় কর্তনে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আংশিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ। ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে নিম্ন অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পে অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আর ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে না করলেই নয় এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে ও স্বীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। পাশাপাশি ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের’ অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকার যে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে সবার আগে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাহলে সরকারের অনেক অর্থের সাশ্রয় হবে উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে এটা তো নতুন নয়। তবে এবার নিশ্চয়ই অনেক বেশি পরিমাণে কমেছে। এর একটা ধাক্কা আসবে তা তো আগেই বোঝা গেছে। কেননা কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্বেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা বিরাজ করছে। এই সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। ফলে আমাদের এখানেও এর প্রভাব পড়েছে। এতে করে সরকারেরও আয় কমেছে।
সরকারে এক কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ইতিমধ্যে প্রণোদনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতির কারণেই সরকার ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে। ইতিমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় বন্ধ করেছে। একইভাবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে অর্থবিভাগ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মহামারীর মধ্যেই নতুন করদাতা অনুসন্ধানের কাজও শুরু করেছে। এনবিআরের রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব ধরনের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য ভ্যাট আদায় বাড়াতে দোকানে ইসিআর মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কভিড-১৯ এর কারণে মানুষ ঘরে বসেই সেবা কিংবা পণ্য পেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এতে ই-কমার্সের বাজার বেড়েছে। অনলাইনে যেসব লেনদেন বা কেনাকটা হচ্ছে সেগুলোর বিষয়েও তদারকি বাড়ানো হচ্ছে।