স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ব বরেণ্য কূটনীতিক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকারের দায়িত্ব পালনকালে ২০০১ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর।
প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করে থাকে ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’। এবার করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুুরী স্মৃতি পরিষদ’।
পরিষদের পক্ষ থেকে সিলেট নগরীর হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সংলগ্ন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সমাধিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিলেটের বিভিন্ন পয়েন্টে দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দুপুরে সিলেট নগরীর স্টার প্যাসিফিক হোটেলের বলরুমে ভার্চুয়ালি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’-এর আজীবন সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগদান করবেন পরিষদের সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) ও স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এহছানে এলাহী।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক- শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক- এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি- এ.টি.এম সোয়েব, স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সহসভাপতি- মাহসুন নোমান রশীদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন- স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের আজীবন সদস্য ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ।
উল্লেখ্য, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে। পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য এবং মাতা সিরাজুন নেছা চেীধুরী ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য।
হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার হাই মাদ্রাসা সেকশনে প্রাথমিক শিক্ষা ও আসামে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৪৭ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংলিশ বারে অধ্যয়ন করেন এবং লন্ডনের ইনার টেম্পলের একজন সদস্য হন।
লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। এছাড়া ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি থেকে স্নাতক ডিগ্রীও অর্জন করেছিলেন।
১৯৫৩ সালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তৎকালীন পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। কূটনীতিবিদ হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে অবস্থান করেছিলেন। তন্মধ্যে রোম, বাগদাদ, প্যারিস, লিসবন, জাকার্তা এবং নতুন দিল্লী অন্যতম।
১৯৭২ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৬ সালের পর সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ এবং জাতিসংঘের শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন সংস্থা বা ইউনিডো’র প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি তিনি ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি নয়া দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বীকৃতির জন্য যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট-১ আসন (সদর- কোম্পানীগঞ্জ) থেকে ১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ, ১৯৮৮ সালে ৪র্থ সংসদ এবং ১৯৯৬ সালে ৭ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই তিনি সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন।