অনুমোদন না নিয়ে পুরান ঢাকার অনেক কেমিক্যাল গোডাউন গোপনে কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। বিশেষ করে কেরানীগঞ্জের পূর্ববন্দ ডাকপাড়া এলাকায় রাসায়নিক গোডাউন ও গদারবাগে ভয়ানক বিস্ফোরণের পর থেকে স্থানীয়রা আরও বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই কমবেশি কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে।
তবে এর সংখ্যা বলতে পারেননি এলাকাবাসী। বেশিরভাগ গোডাউনই চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর গড়ে ওঠে বলে জানান তারা। এখনও দেদার গড়ে উঠছে গোডাউন। কেরানীগঞ্জের অনেক ভবন মালিক মোটা অঙ্কের অর্থের লোভে, অতিরিক্ত অগ্রিম ভাড়া পেয়ে কোনো নিয়মনীতি এবং ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের জন্য গোডাউন ভাড়া দিচ্ছেন।
আতাশুর ও গদারবাগ এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কেরানীগঞ্জ উপজেলার ওই দুটি এলাকায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ছোট-বড় কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। খোঁজখবর নিলে এর সংখ্যা বাড়তেও পাড়ে। তবে প্রতিটি গোডাউনে সব ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে। দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও রাতে কেমিক্যাল আনা-নেওয়া করা হয় এসব গোডাউনে।
আগানগর ইউনিয়নের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা জানান, এলাকার বিভিন্ন সড়কে প্রকাশ্যেই রয়েছে রাসায়নিকের ছোট-বড় বেশকিছু গোডাউন।
সরেজমিনে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহকালে আতাশুরে দেখা মিলে এক নামসর্বস্ব বিহীন এক ভেজাল কেমিক্যালের গোডাউন, যেখানে কোরিয়ান ব্রান্ডের আলিফমিক্স ডব্লিউপি-১০০ নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গোডাউনের ভিতর ঢুকে দেখা যায় লোকাল পণ্য গ্যাসের চুলায় জ্বাল দিয়ে তরল আকারে তৈরী করে নিজেদের বানানো ডিব্বা ও প্লাস্টিকের ড্রামে ঐসকল তরল ভরে প্যাকিং করতেছে এবং মার্কেটে কোরিয়ান প্রোডাক্ট হিসেবে বিক্রি করতেছে। এ বিষয়ে এক গোডাউনের মালিক বলেন ২০২১ সাল থেকে তিনি এখানে এই ব্যাবসা করছেন। তিনি আরো জানান কোনপ্রকার অনুমতি নেননি। যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোনটাই তার নাই, তিনি মার্কেটিং করার চেষ্টা করতেছেন যদি মার্কেটের অবস্থা ভালো হয় তাহলে তিনি কাগজপত্র করবেন।
সরকারি অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া এই ব্যাবসা করা ঠিক কিনা তা জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনেই প্রতিবেদককে বলেন ‘আপনার এখানে আসার কোন অনুমতি আছে কিনা, আপনি পুলিশ প্রশাসন ও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া এখানে আসছেন কেন? ২ মিনিটের ভিতর তার গোডাউন ছেড়ে না গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে হেনস্তা করবেন বলেও হুমকি প্রদান করেন।
এদিকে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের স্থানীয়রা জানান, এখানে সাবান ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় বেশ কয়েকজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আট থেকে দশটি বিশাল গোডাউন গড়ে তুলেছেন। প্রতিদিন গোডাউনে ভ্যান ও পিকআপযোগে শত শত টন বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যাল আনা-নেওয়া ও মজুদসহ বাজারজাত করে আসছে। কেরানীগঞ্জে গড়ে ওঠা এসব কেমিক্যাল গোডাউনের বেশিরভাগেরই অনুমোদন নেই বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এর কোনো হিসাব নেই। এ এলাকার একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কেরানীগঞ্জে দুই বছর ধরে তার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। তবে তার লাইসেন্স কেরানীগঞ্জের বলে কলটি কেটে দেন তিনি।