সিলেটে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক ডালিমের বাসায় হামলা: হামলাকারীদের ধরতে ৫ দিনের আলটিমেটাম
28, November, 2020, 8:34:45:PM
সিলেট ব্যুরো: শহরতলীর শাহপরান এখাকায় প্রায় ৩ মাস থেকে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে সপরিবারে বসবাস করছেন সাংবাদিক ডালিম। তিনি স্থানীয় দৈনিক সিলেটের দিনরাত পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। গত ২৬ নভেম্বর রাত আটটার দিকে তার বাসায় হামলা করে স্থানীয় কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। মূলত চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্যই সাংবাদিক ডালিমের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সাংবাদিক ডালিমের বাসার কাছের তিনটি বাসায় দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসা চলছে। মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টরা ভয়ানক হওয়ায় ভয়ে শক্ত প্রতিবাদ কেউ কখনো করেনি। সম্প্রতি ওই এলাকার মসজিদের মুসল্লি বৈঠক করে মাদক আস্তানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।
এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও হয়। সর্বশেষ বৈঠকে সাংবাদিক ডালিমও অংশ গ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে পুলিশকে অবহিত করা হবে। পুলিশের সাথে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় সাংবাদিক ডালিমসহ কয়েকজনকে। দায়িত্ব পেয়েই গত ১১ নভেম্বর সাংবাদিক ডালিম পুলিশ বরাবরে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে শাহপরানের বাসিন্দারা ও খাদিম চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ীরা স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি জেনে পুলিশে আবেদন না দেয়ার জন্য মাদক কারবারিরা নানাভাবে হুমকি দেয়। কিন্তু সাংবাদিক ডালিম কোন কিছু কর্ণপাত না করেই পুলিশে আবেদন দেন। আবেদন পাওয়ার পর ওই এলাকায় পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়। তিন দিন আগে ওই এলাকা থেকে পুলিশ ইয়াবাসহ ২ জনকে আটক করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৭ টার দিকে র্যাব-৯ অভিযান চালিয়ে চোলাই মদসহ কানাই নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। র্যাব সদস্যরা কানাইকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগের পরপরই সাংবাদিক ডালিমের বাসায় হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। সাংবাদিক ডালিম জানান- মাদক সন্ত্রাসী সাক্ষাত, রুনি, শাওন, শাকিল, নীতি ও শ্যামলীর নেতৃত্বে তার বাসায় হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এসময় তার বাসার সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক ডালিমের শিশু সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই রাতে সাংবাদিক মুজিবুর রহমান ডালিম বাদি হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় শাহপরান উপশহর এলাকার মাদকের হাটের নিয়ন্ত্রক সুগা রানী তাতীসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলা নং-২৬।
মামলার এজাহারে সাংবাদিক ডালিম উল্লেখ করেছেন- তিনি সম্প্রতি সময়ে শাহপরান এলাকার শাহপরান উশপহরের রোড নং-৩/এ (৪) নং বাসা ক্রয় করে বসবাস করছেন। গত তিন মাস ধরে তিনি ওই বাসায় নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। গত সোমবার বাসায় কাজ করার সময় আসামি সাক্ষাৎ, শাকিল, শাওন ও রুনি এসে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পূর্বে তাদের কথা মতো চাঁদা না দেয়ায় রাতে আসামি সুগা রানী তাতীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীরা তার বাসায় হামলা চালায়। আসামিরা বাসার গেইট ভেঙ্গে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করে। তারা বন্ধ করা দরজাও ভেঙ্গে ফেলে। ড্রয়িং রুমের জানালার থাই, ঘরের বাইরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে। তারা এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আসামিরা ঘরের ভেতরে রাখা ইলেকট্রিক সামগ্রী, দুটি সিসি ক্যামেরা নিয়ে যায়।
এদিকে সাংবাদিক ডালিমের বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সিলেট শহরতলির শাহপরান উপশহরসহ আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে সাংবাদিক সমাজে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তার বাসায় গিয়ে সহমর্মিতা জানাচ্ছেন। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার জন্যে তীব্র নিন্দা জানিয়ে মাদক কারবারিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন সবাই। গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর শাহপরান খাদিম চৌমহনী এলাকায় সর্বস্তরের নাগরিক মানববন্ধন করেছেন।
ওইদিন রাতে আবার শাহপরান উপশহরে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, সিলেট জেলা সভাপতি ও হযরত শাহজালাল(রহ:) কাছিমুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহিব্বুল হক, চৌমুহনী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, শাহপরান উপশহরের বাসিন্দা সোহেল আহমদ, মোহাম্মদ আলী খোকন, মিটু আহমদ, আবু জাফর জাহাঙ্গির, জিলুক আহমদ, কালা মিয়া, জলিল মিয়া, মুসলেহ উদ্দিন, রকিবুল ইসলাম লস্কর, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মুনিম, আব্দুল কুদ্দুস, কামাল মিয়া, মাসুক আহমদ, আবুল কাসেম, আব্দুল বাতেন চৌধুরী নাদের, ফারুক আহমদ, আল-আমীন, সালেহ আহমদ, হেলাল মিয়া, আব্দুস সামাদ ও দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। জরুরী সভায় যোগদেন সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কুনু মিয়া, সমাজ সেবী হুমায়ুন কবির চৌধুরী, দক্ষিণ সুরমা জাতীয় পার্র্টির সদস্য সচিব তাজ উদ্দিন আহমদ এপলু, তেতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক মিয়া প্রমুখ। সভায় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ৫ দিনের আল্টিমেটাম দেন। বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করলে সিলেট-তামাবিল রাস্তা অবরোধ সহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলে জানা যায়।