জগন্নাথপুরে আর্চব্রিজ নির্মাণের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি কাজ
3, March, 2024, 7:12:26:PM
কলি বেগম, জগন্নাথপুর:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম আর্চব্রিজ নির্মাণের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি কাজ। এতে জনভোগান্তির সাথে যোগ হয়েছে জনক্ষোভ। শুরুতে কাজের অগ্রগতি ভালো থাকলেও পরে থেমে থেমে চলে কাজ। এর মধ্যে ব্রিজে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজবও মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রথমে কাজের গতি দেখে মানুষ আশাবাদী ছিলেন হয়তো নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তা আর হয়নি। দেখতে দেখতে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় জনভোগান্তির সাথে এখন জনক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। তাই বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে।
জানাগেছে, জগন্নাথপুর পৌর শহরের বুকচিরে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীর উপর বিগত এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম পাকাসেতু নির্মাণ হয়। যা স্থানীয়দের কাছে বড়পুল নামে পরিচিত। এ সেতুটি হওয়ার পর থেকে হাওরবেষ্টিত উপজেলা জগন্নাথপুর যোগাযোগ ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। জগন্নাথপুর থেকে সিলেট হয়ে সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের মাপকাঠিতে এগিয়ে যায় জগন্নাথপুর। যদিও বর্তমানে জগন্নাথপুর থেকে রাণীগঞ্জ সেতু হয়ে সরাসরি রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে।
এরই মধ্যে ২০১০ সালের পর থেকে সময়ের পরিক্রমায় জগন্নাথপুরে বাড়তে থাকে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা। তখন সেতুটি সরু হওয়ায় প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকতো ব্যস্ততম এ সেতুর দুই সম্মুখভাগ। এতে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তাই এখানে বড়সেতু নির্মাণের দাবি জোরালো হয়ে উঠে। অবশেষে জনদাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ মান্নানের প্রাণপন প্রচেষ্টায় ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ৫শ টাকা ব্যয়ে এখানে দৃষ্টিনন্দন আর্চব্রিজ নির্মাণ কাজ অনুমোদন হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির অধীনে বিগত ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আর্চব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হওয়ার মেয়াদ চলতি ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটিবাংলা এন্টারপ্রাইজ। তবে মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে ভূক্তভোগী জনমনে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও নতুন করে আরো ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নতুন বর্ধিত সময় হচ্ছে আগামী আগস্ট পর্যন্ত। এতেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
৩ মার্চ রোববার নির্মাণাধীন আর্চসেতুর পাশে থাকা বিকল্প বাঁশের সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলকারী আবদুল তাহিদ, শাহিন মিয়া, আবদুর রহমান, শফিক চৌধুরী, সুহেল মিয়া, আহমদ উল্লাহ, গৌরাঙ্গ দাস সহ নানা পেশার পথচারী জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। বাঁশের পুরনো এ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। শুনেছিলাম আর্চব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ হবে। এখন দেখছি, হচ্ছে না। বড়পুলটি ভেঙে ফেলার পর থেকে জনভোগান্তি আরো বেড়ে গেছে। এসব ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই।
জগন্নাথপুর সদর বাজার সেক্রেটারি জাহির উদ্দিন বলেন, এ ব্রিজটির কারণে মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। হাট-বাজারের ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা হয়ে গেছে। আরো বেড়েছে জনভোগান্তি। তাই জনস্বার্থে দ্রুত কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজী শাহ নিজামুল করিম বলেন, নির্মাধীন আর্চব্রিজের কারণে গত এক বছর ধরে জগন্নাথপুর-সিলেট লাইনে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। এখন মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হতাশ হয়েছি। এমন হতে পারে না। দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না বলেন, জগন্নাথপুরবাসীকে দৃষ্টিনন্দন আর্চব্রিজ উপহার দেয়ায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী বর্তমান এমপি এমএ মান্নান মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়াটা দুঃখজনক। আমরা ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। এতে কারো গাফিলাতি সহ্য করবো না। জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন বলেন, প্রথমে ফাইলিংয়ের কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে আগামী এপ্রিলের মধ্যেই দৃশ্যমান কাজ হবে বলে আমি আশাবাদী।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন দাবি করে বলেন, এ পর্যন্ত ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তা মাটির নিচে হওয়ায় দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্রিজের মুল ফাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ঢালাইয়ের জন্য সাটারিং করতে লোহার পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে নির্মাণাধীন আর্চব্রিজের পাশে থাকা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থানান্তরে ২ মাস সময় লেগেছে। পরে ব্রিজের পশ্চিম পারে ফাইলিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের স্তুপকৃত আবর্জনার কারণে আরো ২ মাস বিলম্ব হয়েছে। এর মধ্যে ব্রিজে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজবও মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কাজ শেষের স্বার্থে আরো ৬ মাস বর্ধিত করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী আগস্টের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।