সিলেট ব্যুরো: বিভাগীয় শহর সিলেটের প্রাণকেন্দ্র হলো জিন্দাবাজার। এই এলাকাকে যানজটমুক্ত রাখতে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজর সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ। একই সঙ্গে ওই সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত রেখেছে।গত রোববার ও সোমবার দিনব্যাপী দফায় দফায় অভিযান চালায় সিসিক ও ট্রাফিক পুলিশ। বিশেষ করে সিসিকের জনবল কোমর বেঁধে জিন্দাবাজারে প্রবেশমুখের পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে ওই এলাকায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসে। রিকশামুক্ত হওয়ায় জিন্দাবাজারে আগত ব্যবসায়ী,ক্রেতা ও পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে দেখা যায়।
জানা যায়, জিন্দাবাজার এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এছাড়া নগরীর প্রধান প্রধান বিপণিবিতানও এ এলাকা অবস্থিত। জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার-চৌহাট্টা মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে একমুখী (ওয়ানওয়ে) যান চলাচল থাকলেও সম্প্রতি সড়ক বিভাজক স্থাপন করে দ্বিমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পুরোদমে চলছে। পুরো এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
ব্যস্ততম এ এলাকাকে আকর্ষণীয় ও যানজটমুক্ত রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার সড়কে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে নির্দেশনা মানতে ওই এলাকায় সাইনবোর্ড লাগানোর পাশাপাশি মাইকিং করে সিসিক কর্তৃপক্ষ। ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দেশনা ছিল। তবে রিকশা চালক ও মালিকরা তা মানেননি। তারা প্রতিবাদে আন্দোলনের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শুক্রবার সকাল থেকেই প্রতিদিনের মতো রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশকে নিয়ে রোববার মাঠে নামেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এর আগে রোববার সকালে সিটি করপোরেশনের একদল কর্মী ওই এলাকার তিনটি মোড়ে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। পরে বিকেল ৩টার দিকে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপ-কমিশনার ফয়সল মাহমুদের নেতৃত্বে দুটি দল রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা নিয়ে মাঠে তৎপরতা চালায়। এ সময় ব্যস্ত এলাকা পুরোটা রিকশাবিহীন হয়ে পড়লে অন্যান্য যান চলাচলে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করে। এতে জিন্দাবাজারে যাতায়াতকারী লোকজন ও ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বন্দর-চৌহাট্টা সড়কের ফুটপাতটি হকারমুক্ত হওয়ায় সোয়েব আহমদ নামে এক পথচারী স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, যানজটমুক্ত পরিবেশে খোলামেলা চলাচল করতে ভালো লাগছে।
এদিকে, সোমবার থেকে ‘নিষিদ্ধ’ সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার আগেই রিকশাকে থামিয়ে দিতে দেখা গেছে সিসিক কর্মীদের। জিন্দাবাজারের পূর্বদিকে বারুতখানা পয়েন্টে এবং পশ্চিমদিকে জল্লারপার পয়েন্টে রিকশাগুলোতে থামিয়ে দেন সিসিকের নির্ধারিত কর্মচারীরা। যদিও বন্দর-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক ছাড়া নগরীর আর কোনো রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়নি। এসময় এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বাধা প্রদানকারীরা বলেন, মেয়র আরিফুল হক সাহেবের নির্দেশেই এমনটি করা হচ্ছে।
জিন্দাবাজার থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার আগেই রিকশা থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়াতে ভুগান্তিতে পড়ছেন জিন্দাবাজারমুখি লোকজন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়। এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে নগরীরবাসীর প্রত্যাশিত উন্নয়ন করতে চাই। একটু জায়গা হাঁটতে হচ্ছে। এরপরও শৃঙ্খলা ফিরলে বিষয়টি বিবেচনা করব।