স্টাফ রির্পোটার: সিলেট নগরীতে জাল কাবিন তৈরি করে এক নারীকে বিয়ে করে ৫ বছর সংসার করে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে বিদেশে পালানোর সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন স্বামীরূপী এক প্রতারক। গ্রেফতারকৃত ওই প্রতারক হলো তাজ উদ্দিন রনি (৪০)। সে গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দরবাজার এলাকার কালিঢহর গ্রামের হাজি নুরুল হকের ছেলে। তিনি এখন নগরীর এয়ারপোর্ট থানাধীন চৌকিদেখি এলাকার আঙ্গুর মিয়া গলির একটি বাসায় প্রথম স্ত্রী এবং সন্তানসহ বসবাস করেন। রনি পেশায় একজন চাল ব্যবসায়ী।
পুলিশ ও ভিকটিমের বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী ও ৩ সন্তানের কথা গোপন করে ২০১৭ সালে নগরীর মঝুমদারী এলাকার বাসিন্দা সুলতানা আক্তার লুবনার (৩২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন বিবাহিত তাজ উদ্দিন রনি। নানা প্রলোভনে তিনি গোলাপগঞ্জে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন লুবনাকে। তবে সে বিয়ের কোনো কাবিন পরবর্তীতে লুবনা সংগ্রহ করতে পারেননি। বিয়ের পর জানতে পারেন, রনি বিবাহিত এবং প্রথম স্ত্রীর গর্ভে তার ৩টি সন্তানও রয়েছে। সবকিছু জানতে পেরে ভেঙে পড়েন লুবনা। কিন্তু রনিকে ভালোবাসেন তাই সবকিছু মেনে নিয়ে সঠিক কাবিননামার মাধ্যমে শরিয়ত মোতাবেক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে রনিকে চাপ দিতে শুরু করেন তিনি। লূবনার পীড়াপিড়িতে ২০২০ সালে নগরীর বালুচর এলাকার এক কাজি দিয়ে ভুয়া কাবিন নামা তৈরি করে লুবনার সঙ্গে আবারও বিয়ের নাটক করেন রনি। পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে মামলা করেন লুবনা। পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে। এদিকে, ভুয়া কাবিন ও স্ত্রীর মর্যাদা না দেয়া নিয়ে রনি ও লুবনার মনোমলিন্য লেগেই থাকতো। রনির চাপে বাধ্য হয়ে ৫ বছরের সংসারে গর্ভের তিন-তিনটি সন্তান নষ্ট করেন লুবনা। তবে চতুর্থ বাচ্চা নষ্ট করতে দেননি তিনি। একপর্যায়ে প্রতিবাদ করা শুরু করেন এবং দাবি করেন স্ত্রীর মর্যাদা । চতুর্থ বাচ্চাকে নষ্ট করতে না দিয়ে দেখান পৃথিবীর আলো। এ নিয়ে রনির সঙ্গে চূড়ান্ত ঝগড়া হয় এবং তাকে বেধড়ক মারধরও করেন রনি। সেসময় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন লুবনা। অপরদিকে, লুবনাকে হয়রানি করতে তার বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি প্রদানের অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেন রনি। সে মামলায় জামিনে আছেন লুবনা। এই অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করেন রনি। খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় চৌকিদেখির বাসা থেকে এয়ারপোর্ট থানার একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে শনিবার (২ অক্টোবর) আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
ভিকটিম লুবনা বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার সঙ্গে নানা প্রতারণা করে আসছে রনি। আমার গর্ভের ৩টি বাচ্চা নষ্ট করেছে। ব্যবসার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে ১৩ লাখ টাকা। আমি তার কঠোর শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মুহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, রনির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন লুবনা। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলায় শুক্রবার রনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।