মাহবুবুল আম্বিয়া : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম- যার প্রাণশক্তি এর কর্মীগণ। রাষ্ট্রের প্রথম স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ- যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। একে নজরদারীতে রাখে দ্বিতীয় স্তম্ভ পার্লামেন্ট; আর পার্লামেন্টকে নজরে রাখে তৃতীয় স্তম্ভ বিচার বিভাগ।
এই তিনটি রাষ্ট্রীয় স্তম্ভ ঠিকমত কাজ করছে কি-না সেটাই নজরে রাখে গণমাধ্যম। সে কারণে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে গণমাধ্যমকে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ তথা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে।
গণমাধ্যম কর্মীরা রাষ্ট্র, ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের শত্রু নন। দেশ-জনগণ বা বৃহৎ অর্থে অবদমিত মানুষজনের পক্ষে কলম ধরেন সাংবাদিক। এক্ষেত্রে অনুরাগ-বিরাগ নয়, নিরাসক্ততাই সাংবাদিকের পবিত্র অস্ত্র। সেটা বেঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে সংক্ষুব্ধ পক্ষের জন্যও রয়েছে প্রতিকারের আইনসংগত উপায়- প্রেস কাউন্সিল।
কিন্তু আইনসঙ্গত পথ এড়িয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষিত কক্ষে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহীগণ সংঘবদ্ধভাবে সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনাকে অবিশ্বাস্য অশ্রাব্য উপায়ে নিগ্রহ এবং তা চলমান রেখেছেন। নিঃসন্দেহে এই পদক্ষেপ রাষ্ট্র প্রদত্ত ক্ষমতার বেআইনী প্রয়োগ, এক বেপরোয়া সন্ত্রাস।
সরকার তার ভাষায় সৎ নিয়তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আপত্তি উপেক্ষা করেছিল। তখন বিশেষভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে এর কোন অপপ্রয়োগ দেশে ঘটবে না। কিন্তু সেই আইনের সূত্র ধরে ইতোমধ্যে বেশকিছু দেশ কাঁপানো অঘটন আমাদের দেখতে হয়েছে। তখন থেকেই মূলত রাষ্ট্রের দুর্নীতিবাজ নির্বাহীগণ এবং কর্মীবৃন্দ একজোট হয়েছেন বেপরোয়া দুর্নীতিতে। নিজেদের দুর্বৃত্তপনা গোপনে রাখতে এবং সাংবাদিকের নজর আড়াল করতে তারা সরকারের করা বিশ্ব-বিখ্যাত ডিজিটাল এ্যাক্টসহ অফিসিয়াল সিক্রেট এ্যাক্টের অপব্যবহার করে আসছে গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রেটিং প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের পর্যায়ক্রমিক অধগমন অব্যাহতই আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণমাধ্যম দমনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আইনগুলো এ মুহুর্তে বিশ্বের ভয়ঙ্করতম আইন।
গণস্বার্থে গণস্বার্থবিরোধী গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইনগুলো সংশোধন বা বাতিল করা এখন সময়ের দাবী। এই দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের চাইতে চোর-বাটপার দুর্বৃত্তের স্বার্থ কোনভাবেই বড় হতে পারে না।
রোজিনা ইসলামকে গলা চেপে ধরা মানে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ- গণমাধ্যমকে গলাটিপে হত্যা চেষ্টার নামান্তর। প্রজাতন্ত্রের নির্বাহীগণ দেশের মালিক জনগণকে জবাবদিহিতে বাধ্য; জনগণের পক্ষে দায়িত্বপালনকারী গণমাধ্যমকর্মীর গলায় হাত দেবার ধৃষ্টতা পূরনো অনেক কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন বিশ্ব মিডিয়ায় রোজিনার নির্যাতন-নিপীড়ন সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। এতে গণতান্ত্রিক সরকার কতটুকু সুনাম কুড়াচ্ছে তা হয়তো সময়ই বলবে।
পূনশ্চঃ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আলমারীগুলো তো স্বাস্থ্যখাতের বিখ্যাত শাহেদ-মিঠুদের সুকীর্তির ইতিবৃত্তে ঠাসা। ওগুলো রাষ্ট্রের কোন সিক্রেট ডকুমেন্ট হতে পারে না। ওগুলোই আড়ালে রেখেছিলেন নির্বাহীগণ- যা ছিল রোজিনার টার্গেট। তাহলে অফিসিয়াল সিক্রেট এ্যাক্টে মামলা হলো কিভাবে?